বুধবার ৭ মে ২০২৫ - ১২:০২
মরহুম আয়াতুল্লাহ হায়েরি ইয়াযদি ছিলেন একজন রাজনৈতিক দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব

ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমের হাওজা ইলমিয়ার শিক্ষক-সমাজের প্রধান আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ হাশেম হোসেইনি বুশেহরি বলেছেন, আয়াতুল্লাহিল উজমা হায়েরি রাজনৈতিক নীতিমালা ও শর্তাবলীর গভীর জ্ঞান রাখতেন। তিনি সরাসরি রেজা খানের মুখোমুখি না হয়ে হাওজায়ে ইলমিয়াকে টিকিয়ে রাখার পথ বেছে নিয়েছিলেন, যাতে পরবর্তীকালে আয়াতুল্লাহ বোরুজেরদী (রহ.) ও ইমাম খোমেনীর (রহ.) মতো মনীষীদের আবির্ভাব সম্ভব হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আজ সকালে কোম শহরের ইমাম কাযিম (আ.) মাদ্রাসার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত হাওজা ইলমিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ নেতার (আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী) বার্তাটি বহু মূল্যবান দিক নির্দেশনা বহন করে, যা বহু বছর ধরে বিশ্বের ইসলামি হাওজাগুলোর জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, এই বার্তার মাধ্যমে বোঝা যায় সর্বোচ্চ নেতা হাওজায়ে ইলমিয়ার ভূমিকা ও অবস্থান গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রতিটি সমস্যার জন্য বাস্তবসম্মত সমাধানও দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বার্তায় হাওজা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং হাওজা ও রাষ্ট্রের প্রশাসনিক অংশগুলোর মধ্যে সংযুক্তির বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই বার্তা থেকে বোঝা যায়, শতবর্ষ পূর্ণ হওয়া হাওজায়ে ইলমিয়া আজ আরও গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন দায়িত্ব বহন করছে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, আয়াতুল্লাহ হায়েরি হাওজা পুনঃপ্রতিষ্ঠাকালে ইসলাম রক্ষার গভীর উদ্বেগ ধারণ করতেন। আজ ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের ৪৬ বছর পর আমরা উপলব্ধি করতে পারি—তৎকালীন ‘ইনকিলাবি’ মানসিকতার আলোচনার জায়গা ছিল, তবে আজ সেই চেতনার ভিন্ন আঙ্গিকে অনুসন্ধান প্রয়োজন।

আয়াতুল্লাহ বুশেহরি বলেন, আয়াতুল্লাহ হায়েরি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়ের ভিত্তি ও শর্তাবলি ভালোভাবে জানতেন। তিনি সরাসরি রেজা খানের বিরোধিতা করেননি, যাতে হাওজা টিকে থাকে এবং ভবিষ্যতে বিশাল মনীষীদের জন্ম দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, মরহুম হায়েরির হাওজা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ইসলামী বিপ্লব প্রতিষ্ঠার চেয়েও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। সর্বোচ্চ নেতাও বলেছেন, ইসলামী বিপ্লব ছিল তাঁর পদক্ষেপের ফল এবং যদি তিনি হাওজা শিক্ষা ও চিন্তাচর্চার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না করতেন, তাহলে পরবর্তী কোনো আন্দোলন সম্ভব হতো না।

তিনি ইমাম সাদিক (আ.)-এর একটি হাদিস উল্লেখ করেন: “শিয়া আলেমগণ হচ্ছেন সীমান্ত রক্ষাকারী”—যাঁরা কখনও বিশ্বাসের সীমান্ত, কখনও ভৌগোলিক সীমান্ত রক্ষা করেন। যদি বিশ্বাস রক্ষাকারীরা না থাকেন, তাহলে ভৌগোলিক রক্ষাও সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, কোম হাওজা একটি শিকড়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান। আজ আমরা হাওজার শতবর্ষ পূর্তিকে স্মরণ করছি, তবে এটি কেবল একশ বছর আগের ইতিহাস নয়—বরং এর শেকড় আহলুল বাইতের (আ.) যুগে গিয়েই পৌঁছায়, যদিও ইতিহাসে এটি বহু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, মরহুম হায়েরি ছিলেন পরহেজগার, ওলামা সমাজের কাছে বিশ্বস্ত, উচ্চতর জ্ঞানে পারদর্শী, রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয়ে উদ্বিগ্ন এবং সংগঠন পরিচালনায় দক্ষ। যারা বলেন তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন, তারা তাঁকে অবমূল্যায়ন করছেন। কারণ তিনি অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর চিন্তাভাবনা করতেন।

তিনি আরও বলেন, তিনি বিদেশিদের রাজনৈতিক-সামাজিক হস্তক্ষেপে কষ্ট পেতেন এবং সাধারণ একজন তালেবের মতো সাধারণ মানুষের পাশে থাকতেন। এটাই ছিল তাঁর জীবনের শিক্ষা ও আদর্শ, যা আমাদের অনুসরণ করা উচিত।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha